লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ আরবিতে লেখা । গুরুত্ব ও ফজিলত
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ আরবিতে লেখা
ঈমানের পাঁচটি মূল স্তম্ভের প্রথমটি হল কালেমা। এটি ইসলামিক বিশ্বাসের মূলমন্ত্র, যা শাহাদাহ বা তাওহিদের সাক্ষ্য হিসেবে পরিচিত। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ কালেমা মুখে পাঠ অন্তরে বিশ্বাস ও তার দাবির উপর আমল করার দ্বারা একজন মানুষ মুসলিম হয়ে ওঠেন। এই কালেমা দ্বারা আল্লাহর একত্ব এবং মুহাম্মদ (সা.)- রাসুল হওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। আজ আমরা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” আরবিতে লেখা, শব্দ বিশ্লেষণ, গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ আরবিতে লেখা
আরবি লেখা ও উচ্চারণ:
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ
অর্থ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ: “আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।” মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ: “মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল।”
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ ﷺ এর গুরুত্ব
"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ" ইসলামের মূল ভিত্তি এবং মুসলমানদের ঈমানের প্রথম স্তম্ভ। এটি শাহাদাহ বা তাওহিদের সাক্ষ্য বলে পরিচিত। এই কালেমার গুরুত্বকে নিম্নোক্ত দিকগুলোতে ব্যাখ্যা করা যায়:
১. ঈমানের ভিত্তি
এই কালেমা ছাড়া কেউ মুসলমান হতে পারে না। এটি আল্লাহর একত্ববাদ (তাওহিদ) এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাসুলত্বে বিশ্বাসের প্রকাশ।
"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" এর মাধ্যমে ব্যক্তি ঘোষণা করে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।
"মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ" এর মাধ্যমে স্বীকার করে যে মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল।
২. জান্নাতের চাবিকাঠি
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
"যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সঙ্গে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।"
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ১২৮)
এটি জান্নাতে প্রবেশের মৌলিক শর্ত এবং আল্লাহর রহমত পাওয়ার মাধ্যম।
৩. জীবনের লক্ষ্য ও আদর্শ নির্ধারণ
কালেমাটি একজন মুসলমানকে তার জীবনের সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়। এটি তাকে শিরক, কুসংস্কার এবং পাপাচার থেকে বিরত রাখে।
আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস মানুষকে দাসত্বের অন্য সব শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দেয়।
এটি আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সুন্নাহ অনুসরণের অঙ্গীকার।
৪. তাওহিদের মর্ম
তাওহিদ অর্থ হলো আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করা এবং সব ধরনের শিরক থেকে মুক্ত থাকা।
"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" মানে হলো আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ইবাদতের যোগ্য নয়।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
"তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলবে এবং তাতে কোনো সন্দেহ করবে না, তার জন্য জান্নাত বাধ্যতামূলক।"
(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬)
৫. পাপ মোচনকারী
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা সমস্ত পাপকে ধ্বংস করে দেয়, যতক্ষণ না তা আন্তরিকভাবে বলা হয়।"
(তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৯৮)
৬. আখিরাতে নাজাতের মাধ্যম
হাদিসে এসেছে:
"কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা একজন বিশ্বাসীর আমলনামা দেখবেন। যদি তার পাপ পাহাড়সমানও হয়, তবে এই কালেমার ওজন তা অতিক্রম করবে।"
(সহিহ মুসলিম)
৭. শয়তানের বিরুদ্ধে ঢাল
"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" একজন মুমিনের জন্য শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং ক্ষতি থেকে রক্ষাকারী ঢাল হিসেবে কাজ করে।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ ﷺ এর প্রভাব
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ ﷺ শুধু একটি কালেমা নয় এটি জীবনের একটি পূর্ণাঙ্গ দর্শন এবং বিশ্বাসের মূল ভিত্তি। একজন মুসলিমের ব্যক্তি, সমাজ এবং আখিরাতের ওপর এই কালেমার গভীর প্রভাব রয়েছে। নিচে এর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব
ক. আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি: এই কালেমা একজন মুমিনকে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখতে শেখায়।এতে দুনিয়ার কোনো বিপদ বা ভয় মানুষকে দুর্বল করতে পারে না।
খ. পাপ থেকে বিরত রাখে: কালেমা স্মরণ করিয়ে দেয় যে আল্লাহ সর্বদা আমাদের পর্যবেক্ষণ করছেন।পাপের ভয় এবং আল্লাহর ভয় মানুষকে সঠিক পথে থাকতে সাহায্য করে।
গ. নৈতিক উন্নতি: এই কালেমা ব্যক্তি চরিত্রে সততা, ধৈর্য এবং সহনশীলতার মতো গুণাবলির বিকাশ ঘটায়।এটি মানুষের ভেতরে নম্রতা এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জাগ্রত করে।
২. পারিবারিক জীবনে প্রভাব
ক. পারিবারিক বন্ধন শক্তিশালী করে: কালেমার শিক্ষা অনুসারে, পারিবারিক জীবনে আল্লাহর নির্দেশ মানা এবং পরস্পরের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হয়।পরিবারের সকল সদস্যের মধ্যে ভালোবাসা ও সম্মান বৃদ্ধি পায়।
খ. সঠিক দিকনির্দেশনা: আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সুন্নাহ অনুসরণের মাধ্যমে একটি সুস্থ পারিবারিক পরিবেশ তৈরি হয়।
৩. সামাজিক জীবনে প্রভাব
ক. ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য: এই কালেমা সব মুসলমানকে একটি উম্মাহ হিসেবে ঐক্যবদ্ধ করে। জাতি, বর্ণ এবং ভাষার ভেদাভেদ দূর করে সবাইকে এক কাতারে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়।
খ. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা: সমাজে সকল মানুষের প্রতি সমান আচরণ এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে প্রভাব রাখে।দুর্নীতি, শোষণ এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
গ. শান্তি ও শৃঙ্খলা: সমাজে শান্তি এবং শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় কালেমার শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি মানুষকে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে উদ্বুদ্ধ করে।
৪. আধ্যাত্মিক জীবনে প্রভাব
ক. আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করে: এই কালেমা একজন মুমিনকে আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল হতে এবং তাঁর দাসত্বে নিজেকে সঁপে দিতে শেখায়।
খ. দোয়া ও ইবাদতে মনোযোগ: কালেমা বারবার উচ্চারণ করা মানুষকে দুনিয়াবি চিন্তা থেকে আখিরাতের প্রতি মনোযোগী হতে উদ্বুদ্ধ করে।
গ. আখিরাতের প্রস্তুতি এই কালেমা আখিরাতে জান্নাতের চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করে।
প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন ১: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ বলা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: এটি ইসলামের মূল বিশ্বাস। আল্লাহর একত্ব ও মুহাম্মাদ (সা.)-কে রাসুল হিসেবে মেনে নেওয়া ইসলামের প্রথম স্তম্ভ। এর মাধ্যমে একজন মুসলমান তার ঈমানের ঘোষণা দেন।
প্রশ্ন ২: ইসলাম গ্রহণ করতে হলে কি এই কালেমা উচ্চারণ করতে হবে?
উত্তর: হ্যাঁ, কেউ যদি ইসলাম গ্রহণ করতে চান, তাহলে এই কালেমা অন্তর থেকে বিশ্বাসসহ উচ্চারণ করতে হবে।
প্রশ্ন ৩: কালেমা উচ্চারণের ফজিলত কী?
উত্তর: কালেমা উচ্চারণ করলে ব্যক্তির পাপসমূহ মাফ হয় এবং সে আখিরাতে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।
প্রশ্ন ৪: কালেমার অর্থ কী?
উত্তর: কালেমার অর্থ হলো: “আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই, এবং মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসুল।”
প্রশ্ন ৫: কতবার কালেমা বলা উচিত?
উত্তর: নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই, তবে প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে এই কালেমা মুখে ও মনে জারি রাখা উচিত।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url