OrdinaryITPostAd

বাংলাদেশর বহুমুখী পদ্মা সেতু কিভাবে হলো

পদ্মা সেতু বা পদ্মা বহুমুখী সেতু হচ্ছে বাংলাদেশ এর নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সেতু সড়ক ও রেল। এর মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হয়েছে। সেতুটি ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয়। এই দিন বাংলাদেশের প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন।

                                                       


পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত পদ্মা সেতু একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু। সেতুটি  দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত উত্তর-পুর্বাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। মূল সেতুর কাজ করেছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডট 

পোস্ট সূচিপত্রঃ বাংলাদেশের পদ্মা সেতুর বিস্তারিত 

সড়ক ও সেতু প্রান্তের সুবিধা

মাওয়া প্রান্তের দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ৬১৭ কিলোমিটার। এতে রয়েছে ৪ লেনের ডুয়েল ক্যারেজওয়ে। মোট রাস্তা ২৭ দশমিক ৬ মিটার। এই প্রান্তে রয়েছে ২ দশমিক ১৪১ কিলোমিটার সার্ভিস রোড ও শূন্য দশমিক ৬৮২ কিলোমিটার স্থানীয় সড়ক। পাশাপাশি রয়েছে টোল প্লাজা, পুলিশ স্টেশন, সার্ভিস এরিয়া-০১, ওয়ে স্টেশন, ইমারজেন্সি রেসপনস এরিয়া ইত্যাদি।


জাজিরা প্রান্তের দৈর্ঘ্য ১০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। এতে রয়েছে ৪ লেনের ডুয়েল ক্যারেজওয়ে। মোট রাস্তা ২৭ দশমিক ৬ মিটার। ৫টি সেতু, ২০টি বক্স কালভার্ট, ৮টি আন্ডারপাস সংযোগ তৈরি করেছে ১২ কিলোমিটার সার্ভিস রোড ও ৩ কিলোমিটার স্থানীয় সড়কের। এ ছাড়া রয়েছে, টোল প্লাজা, পুলিশ স্টেশন, সার্ভিস এরিয়া-০৩, ওয়ে স্টেশন, ইমারজেন্সি রেসপনস এরিয়া ইত্যাদি।

সেতুর প্রভাব

পদ্মা সেতুর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল, মংলা বন্দরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ তৈরি হয়েছে।রাজধানী এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মধ্যে যাতায়াতের সময় এক-চতুর্থাংশ কমে আসবে। এতে করে পর্যটন খাতেরও ব্যাপক উন্নয়ন হবে।

প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ের এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অংশ হওয়ায় পদ্মা সেতু আঞ্চলিক সংযোগকে সহজতর করবে।নির্মাণ খাতে ২৯ শতাংশ, কৃষিখাতে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ এবং উৎপাদন ও পরিবহনে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পদ্মা সেতু।

পদ্মা সেতুর প্রভাবে এই অঞ্চলে দারিদ্র্য ১ শতাংশ কমবে এবং জাতীয়ভাবে কমবে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ।দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ১ দশমিক ৭ শতাংশ এবং জাতীয়ভাবে শূন্য দশমিক ৫৬ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে।

পদ্মা সেতুর জন্য করা নদী শাসনের ফলে ৯ হাজার হেক্টর জমি খরা ও বন্যা থেকে বাঁচবে, যার আর্থিক মূল্য ১৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।মাওয়া-জাজিরা রুটে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ফেরি সার্ভিস খরচ বাঁচবে।

সেতুর মাধ্যমে ইউটিলিটি

পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ৭৬০ মিলিমিটার ব্যাসের গ্যাস ট্রান্সমিশন লাইন তৈরি করা হয়েছে। ১৫০ মিলিমিটার ব্যাসের ফাইবার অপটিক্যাল এবং টেলিফোন লাইন টানা হয়েছে।মূল সেতু থেকে ২ কিলোমিটার ডাউনস্ট্রিমে নদীতে পাইল ফাউন্ডেশনের ওপর ৭টি হাই ভোল্টেজ ইলেকট্রিক লাইন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে।

পাইল

পদ্মা সেতুর পাইলগুলো র‌্যাকড (ইনক্লিনড ১ এইচ: ৬ভি) ইস্পাত টিউবুলার চালিত। প্রতি পিলারে রয়েছে ৬টি পাইল, যার প্রতিটির ব্যাসার্ধ ৩ মিটার ও দৈর্ঘ্য ১২৮ মিটার।সেতুতে মোট পাইল রয়েছে ২৭২টি। পাইলে ব্যবহৃত রিবার ৪০ মিলিমিটারের। মোট রিবার রয়েছে ১৩২টি।

সেতুর সহনশীলতা

পদ্মা সেতু তৈরি করা হয়েছে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় করে।

যান চলাচল

পদ্মা সেতু দিয়ে ২০২২ সালে প্রতিদিন প্রায় ২৪ হাজার যানবাহন চলাচল করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০৫০ সাল যা ৬৭ হাজার হতে পারে।

পদ্মা সেতুর টোল

পদ্মা সেতুতে চলাচল করতে মোটরসাইকেলে ১০০ টাকা, কার বা জিপে ৭৫০ টাকা, পিকআপ ভ্যানে ১ হাজার ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসে ১ হাজার ৩০০ টাকা, ছোট বাসে (৩১ আসন বা এর কম) ১ হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি বাসে (৩২ আসন বা এর বেশি) ২ হাজার টাকা, বড় বাসে (৩ এক্সেল) ২ হাজার ৪০০ টাকা, ছোট ট্রাকে (৫ টন পর্যন্ত) ১ হাজার ৬০০ টাকা।
মাঝারি ট্রাকে (৫ টনের বেশি থেকে ৮ টন) ২ হাজার ১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৮ টনের বেশি থেকে ১১ টন পর্যন্ত) ২ হাজার ৮০০ টাকা, ট্রাক (৩ এক্সেল পর্যন্ত) ৫ হাজার ৫০০ টাকা, ট্রেইলার (৪ এক্সেল পর্যন্ত) ৬ হাজার টাকা এবং ট্রেইলার (৪ এক্সেলের বেশি) ৬ হাজারের সঙ্গে প্রতি এক্সেলে ১ হাজার ৫০০ টাকা যোগ করে টোল দিতে হবে।

স্প্যান, পিলার ও ডেক

পদ্মা সেতুর মোট স্প্যান ৪১টি, যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার।
পদ্মা সেতুর মোট পিলার রয়েছে ৪২টি।
এর ডেকের উচ্চতা ১৩ দশমিক ৬ মিটার।

উপরের ডেকে রয়েছে ২২ মিটার প্রশস্ত পাথরের ডেক স্ল্যাব, যার উভয় দিকে ২ দশমিক ৫ মিটার শক্ত শোল্ডার। নিচের ডেকে রয়েছে সিঙ্গেল ট্র্যাক ডুয়েল গেজ রেল লাইন।
পদ্মা সেতুর নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স ১৮ দশমিক ৩০ মিটার।

ভায়াডাক্ট

মাওয়া প্রান্তে মোট স্প্যান ৩৯টি। এর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৭৮ দশমিক শুন্য ৩ মিটার। জাজিরা প্রান্তে স্প্যান ৪২টি। যার দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৬৭০ দশমিক দশমিক শুন্য ৩ মিটার।
মোট সড়ক ভায়াডাক্ট রয়েছে ৮১ স্প্যান, যার মোট দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ১৪৮ দশমিক শুন্য ৬ মিটার।
এ ছাড়া, মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে রেল ভায়াডাক্ট রয়েছে ১৪ স্প্যান, যার দৈর্ঘ্য ৫৩২ মিটার।

স্টিল ও রিবার

পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট ৯২ হাজার মেট্রিক টন স্টিল ব্যবহৃত হয়েছে। যার মধ্যে বিএসআরএম থেকে নেওয়া হয়েছে ৮৮ হাজার মেট্রিক টন।সেতুর জন্য ৫০ মিলি মিটারের বিশেষ রিবার ব্যবহার করা হয়েছে ১ হাজার ১৩০ মেট্রিক টন। যার মধ্যে বিএসআরএম সরবরাহ করেছে ১ হাজার মেট্রিক টন।

পদ্মা সেতুর টাইমলাইন

১৯৯৮-১৯৯৯

প্রাক–সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে।
২০০৩-২০০৫
নিজস্ব অর্থায়নে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করে জাপানের জাইকা।
২০০৬
ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পরিকল্পনা করা হয় বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে।

২০০৯-২০১১

বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন করা হয়। নিউজিল্যান্ডভিত্তিক মনসেল এইকম সেতুর পূর্ণাঙ্গ নকশা তৈরি করে। জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর জন্য অর্থায়ন করে এডিবি ও বাংলাদেশ সরকার।
জুন ২০১২
বিশ্বব্যাংক তাদের ঋণ বাতিল করে।
জুলাই ২০১২
বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়।

১৭ জুন ২০১৪

মূল সেতু নির্মাণ কাজের জন্য চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড সঙ্গে চুক্তি হয়।২৬ নভেম্বর ২০১৪সেতুর মূল নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

১২ ডিসেম্বর ২০১৫

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর কাজ উদ্বোধন করেন।

৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

প্রথম স্প্যান বসানো হয়।

১০ ডিসেম্বর ২০২০

শেষ স্প্যান বসানো হয়।
২৫ জুন ২০২২
পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেষ কথাঃ 

পদ্মা সেতুর জন্য করা নদী শাসনের ফলে ৯ হাজার হেক্টর জমি খরা ও বন্যা থেকে বাঁচবে, যার আর্থিক মূল্য ১৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।মাওয়া-জাজিরা রুটে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ফেরি সার্ভিস খরচ বাঁচবে।তাই বলা যাই পদ্মা সেতু দেশের উন্নয়ন সমবৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করবে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url